সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা জমাচ্ছেন মানে ট্যাক্স কাটবে না? ভুল ধারণার বশবর্তী না হয়ে জেনে নিন আয়করের আসল নিয়ম সাধারণ মানুষ তার উপার্জনের টাকা জমান ব্যাঙ্কে। সাধারণত কারেন্ট অ্যাকাউন্ট অথবা সেভিংস অ্যাকাউন্ট এর মাধ্যমে যেদিন উপার্জনের টাকা জমা করেন। বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই দেখা যায় তারা সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে পছন্দ করেন। প্রথম কথা হল সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদের হার বেশি। আর দ্বিতীয় কথা হল আয়কর সংক্রান্ত সুবিধা। অনেকেই মনে করেন যে, সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা করার টাকার উপর প্রাপ্ত সুদ করমুক্ত হয়। যদি ওই ধারণাটি কতটা সঠিক তা জানতে হলে আপনাকে আয়করের নিয়মগুলি বুঝে নিতে হবে।
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আমাদের জীবনে অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধুমাত্র যে টাকা জমানো তা নয়,
বরং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর এখন স্কুল কলেজ বিভিন্ন পরীক্ষার ক্ষেত্রেও কাজে লাগে। এছাড়া
সরকারি সাহায্য পাওয়া, প্রকল্পের আবেদন করা, সব ক্ষেত্রেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর লাগে। বোর্ড পরীক্ষাতেও এখন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নম্বর জমা দিতে হয়। ফলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরটি বিশেষ প্রয়োজনীয় সবার কাছে। এখন কথা হচ্ছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে কোন ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা জনক? কারণ অ্যাকাউন্ট বিভিন্ন ধরনের হয়, জনসাধারণকে তার মধ্যেই বেছে নিতে হয় যে তাদের প্রয়োজন ঠিক কোন ধরনের অ্যাকাউন্ট।
আয়কর জমা প্রত্যেকটি মানুষের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আয়কর সম্বন্ধীয় নিয়ম রয়েছে আমাদের দেশে। তবু আয়কর নিয়ে নানান ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে মানুষের মধ্যে। প্রত্যেক বছর একটি নির্দিষ্ট সময় আয়কর জমা দিতে হয় প্রত্যেক নাগরিককে।কর জমা দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে দেয় আয়কর দপ্তর। আমরা আমাদের উপার্জনের যে অর্থ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করি, সেখান থেকে যে সুদ আসে সেই সুদ ও কিন্তু আয়কর গণনার মধ্যে পড়ে। অনেকে মনে করেন যে এই সুদ হয়তো যোগ করা হয় না। কিন্তু সে ধারণা আদতে ভুল। আয়কর আইন অনুসারে, সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে প্রাপ্ত সুদ আয়করের গণনায় ধরা হয়।
অনেকেই মনে করেন আয় কর ফাঁকি দিয়ে পার পেয়ে যাবেন, তারা হয়তো জানেন না আয়কর ফাঁকি দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। যদি আপনি ধরা পড়েন তাহলে কঠোর শাস্তি হতে পারে। আমাদের দেশে আয় করের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। প্রত্যেক নাগরিকের উচিত সেই নিয়ম মেনে চলা। আপনি যদি নীতিবিরুদ্ধ কাজ করেন, তাহলে শাস্তি থেকে বাঁচতে পারবেন না। আয় কর ফাঁকি দিলে হতে পারে মোটা টাকার জরিমানা। তাই কর ফাঁকি না দিয়ে বছরের নির্দিষ্ট সময় মতো কর জমা দেওয়া বাঞ্ছনীয়। সদ্য শেষ হয়েছে গত ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষ। ৩১ শে মার্চের আগে আয়কর জমা দিতে হয়েছিল দেশের নাগরিকদের। ১ এপ্রিল থেকে নতুন অর্থবর্ষ শুরু হয়েছে দেশে। নতুন কর ব্যবস্থা শুরু হলেও পুরনো কর ব্যবস্থা বাতিল করেনি দেশের সরকার।
আমাদের দেশে দু-ধরনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বেশি মানুষ ব্যবহার করেন। তার মধ্যে একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট, আর অপরটি কারেন্ট অ্যাকাউন্ট। যারা মূলত অর্থ সঞ্চয়ের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন, তাদের জন্য রয়েছে সেভিংস অ্যাকাউন্ট। এছাড়া এই একাউন্টে মিলে সুদের সুবিধা। একটি সেভিংস অ্যাকাউন্টে যে অর্থ জমা পড়ে তার ওপর একটি সুদ দেওয়া হয়। সেই সুদ ও কিন্তু আয় কর হিসেবের মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ আপনার সেভিংস অ্যাকাউন্টে যে সুদ জমা হচ্ছে, তার ওপর থেকেও কাটবে আয়কর। কোনো সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা টাকার সুদের উপরেও ট্যাক্স কাউন্ট হয়।
একটি ব্যাংকের সেভিংস অ্যাকাউন্টে নিয়ম বলছে, এই অ্যাকাউন্টে জমা করা টাকার কোন সীমা নেই। অর্থাৎ একজন অ্যাকাউন্টধারী যত খুশি টাকা জমা করতে পারেন। আবার অনেক ব্যাংকে এই সেভিংস অ্যাকাউন্টে নূন্যতম ব্যালেন্স রাখার ক্ষেত্রেও বিধি নিষেধ চাপানো হয় না। তবে যদি একজন অ্যাকাউন্টধারী তার অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম সীমার চাইতে বেশি টাকা রাখেন, তাহলে সেই টাকার উপর উক্ত ব্যক্তিকে ট্যাক্স দিতে হবে। এরকম পরিস্থিতিতে আপনার করণীয় হল সেই রকম টাকা রাখা যা ITR এর আওতায় আসে। আপনি যদি এর চেয়ে বেশি টাকা ব্যাংকে রাখেন তাহলে সেই টাকার ওপর যে সুদ পাওয়া যাবে, তা আয়কর হিসেবে আওতায় আসবে।
ব্যাংকের সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে কত পরিমান কর গণনা করা হয়?
আয় করের হিসেব বলছে, এই দেশের সেভিংস অ্যাকাউন্টধারী একজন নাগরিকের বার্ষিক আয় যদি ১০ লক্ষ টাকা হয়, তাহলে তিনি তার সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদ পান ১০ হাজার টাকা। অতএব সব মিলিয়ে সেই ব্যক্তির বার্ষিক আয় হয়, ১০ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। আয়করের নিয়ম বলছে, ব্যক্তির এই আয় কর হিসেবের আওতাভুক্ত। বা বলা যায় এই আয় কর যোগ্য। সেক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টধারীকে
কর দিতে হবে। এছাড়া আয় করের নিয়ম বলছে, যদি একজন ব্যক্তি তার সঞ্চয় অ্যাকাউন্টে একটি অর্থ বছরে ১০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি নগদ অর্থ রাখেন, তাহলে সেই ব্যক্তিকে আয়কর বিভাগকে জানাতে হবে। নিয়ম অনুসারে, ১০ লক্ষ আয় কর যোগ্য এবং ওই ব্যক্তিকে অবশ্যই ট্যাক্স জমা করতে হবে। তা না করে যদি ব্যক্তি কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে গুরুতর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।