স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প সারা ভারতে নজর কেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের জন্য মমতা ব্যানার্জী স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের (Swasthys Sathi Scheme) সুচনা করেন। এই প্রকল্পে স্বল্প খরচে এবং বিনামুল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া হয়। রাজ্য ও রাজ্যের বাইরের একাধিক সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে। প্রতি বছর লাখ টাকা পর্যন্ত পরিবারের লোকজন এই সুবিধা পেয়ে থাকেন। এবার এই প্রকল্পে আরও নতুন সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। এক নজরে দেখে নিন, কি কি পাবেন।
স্বাস্থ্য সাথী কার্ড
স্বাস্থ্য সাথী কার্ড হল একটি বিনামুল্যের স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প যা পশ্চিমবঙ্গ সরকার 2017 সালে চালু করেছে। এটি জন মত নির্বিশেষে সকলেই এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন। এই কার্ড পরিবারের মহিলার জন্য হলেও, পরিবারের সকলে এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। এই প্রকল্পে বিনামূল্যে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের সুবিধা
এই স্কিমটি হাসপাতালে ভর্তির খরচ, ওষুধ এবং ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা সহ চিকিৎসার সমস্ত পরিষেবা কে কভার করে। অর্থাৎ সহজ ভাষায় বলা যায়, কেউ হাসপাতালে ভর্তি হলে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা, অপারেশন, ওষুধ, ও পরীক্ষা নিরীক্ষার খরচ সম্পূর্ণ ক্যাশলেস পরিষেবা পাওয়া যায়। এই কার্ড থাকলে, হাসপাতালে ভর্তির আগে এবং পরবর্তী খরচ, সেইসাথে অ্যাম্বুলেন্স খরচও কভার করে। তা ছাড়াও, এটি ডে-কেয়ার পদ্ধতি, হোম নার্সিং এবং প্রতিরোধমূলক যত্ন পরিষেবাগুলির জন্য ক্লেইম করা যায়।
সাস্থ্যসাথী কার্ডের পরিষেবা
স্বাস্থ্য সাথী কার্ড পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে অনেক সুবিধা প্রদান করে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, অনেক সময় দুর্ঘটনা, বা হটাত অসুস্থ হলে, অনেকের কাছেই টাকা থাকে না, এই কার্ড থাকলে তাৎক্ষণিক ভাবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যায় এবং চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া যায়। আর এতে বিনা চিকিতসায় বা দেরিতে চিকিৎসার কারনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কমে। যদিও এই কার্ড সকল হাসপাতালে গ্রহণযোগ্য না হলেও, রাজ্যের বড় একটা অংশে এই কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিসেবা দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অভিযোগ
ইদানিং অভিযোগ রয়েছে, অনেক হাসপাতাল এই কার্ড নিচ্ছেন না। বা নিলেও অর্ধেক টাকা ক্যাশ আদায় করছেন, অর্ধেক টাকা খরচ দেখাচ্ছেন। যার ফলে সরকারের স্বদিচ্ছা থাকলেও হাসপাতালের দুঃব্যাবহারের জন্য অনেক সাধারণ মানুষ সঠিক পরিষেবা পছেন না। যার ফলে অভিযোগ জানাচ্ছেন অনেকেই। আর এই খবর পেয়ে সাথে সাথে পদক্ষেপ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, যে সমস্ত হাসাপাতাল Swasthysathi Card নিতে অস্বীকার করবেন, বা সম্পূর্ণ ক্যাশলেস দেবেন না, তাদের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে। বা বাংলায় ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। যদিও এতে কিছুটা পরিষেবা পাওয়া গেলেও, সকলে এই নির্দেশ মাঞ্ছেন না বলে বার বার অভিযোগ আসছে। অন্যদিকে সরকারের দেওয়া রেট অনুযায়ী চিকিৎসার খরচ অনেক বেশি বলে নারসিং হোম গুলো সেই রেট অনুযায়ী মেডি ক্লেইম নিতে অস্বীকার করছে।
এই পরিষেবার গুরুত্ব
এছাড়াও, এই প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে। সমস্ত বাসিন্দাদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা কভারেজ পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে, বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছে বাংলার মানুষ। যে সমস্ত মানুষ মেডি ক্লেইম বা হেল্টহ ইন্সুরেন্স করতে পারেনা, তারা এই প্রকল্প পেয়ে সেই পরিষেবা বিনামূল্যে পাচ্ছেন। এটি রাজ্য সরকারের সত্যিই একটি ভালো উদ্যোগ। যদিও কেন্দ্রের আয়ুস্মান ভারত রয়েছে, তবে সেখানে অনেক শর্ত রয়েছে, সেই শর্ত অনুযায়ী জন মত নির্বিশেষে পরিষেবা পাওয়া সম্ভব ন। সেই দিক দিয়ে স্বাস্থ্যসাথী পরিষেবা কোনও শর্ত রাখে না। যে কেউ এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
শেষ কথা
স্বাস্থ্য সাথী কার্ড পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি মহান উদ্যোগ যা সকলের জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং নাগরিকদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রচারের দিকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই স্কিমটি নিশ্চিত যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বাস্থ্য ও মঙ্গলের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যদিও কিছুটা খামতি থাকলেও, পশ্চিমবঙ্গের মত জনবহুল রাজ্যে, এতো লোকের বিনামূল্যে পরিষেবা দেওয়া একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়, আর সেই দিক দিয়ে সরকারের পদক্ষেপ অবশ্যই সাধবাদ পাওয়ার দাবি রাখে।
আরও অধিক বিস্তারিত তথ্য জানতে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://swasthyasathi.gov.in/ এ প্রবেশ করার জন্য অনুরোধ করছি। ধন্যবাদ!