ফেলে দেবেন না পুরনো স্মার্টফোন! হাজার হাজার টাকা বাঁচবে এই কাজে লাগান।

কিছুদিন যেতে না যেতেই নিত্যনতুন ফিচারসমৃদ্ধ স্মার্টফোন নিয়ে বাজারে হাজির হয় নির্মাতা কোম্পানিগুলো। স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম থেকে শুরু করে অ্যাপ সবই আপডেট হচ্ছে আর সঙ্গে বাড়ছে আকারেও ।

নজরকাড়া নকশা আর প্রয়োজনীয় সব ফিচারযুক্ত নতুন স্মার্টফোন হাতে পেয়েই পুরোনো স্মার্টফোনটি অবহেলায় ফেলে রাখেন অনেকে। তবে চাইলে পুরোনো স্মার্টফোন বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়।

কাজের খাতিরে আপনি না হয় আরেকটি নতুন ফোন কিনলেন, কিন্তু পুরোনো ফোনটির কী হবে, ফেলে তো আর দেওয়া যায় না। তাহলে চলুন, পুরোনো স্মার্টফোনের ভিন্ন কিছু ব্যবহার জেনে নিই।

অ্যাপ্লিকেশন পরীক্ষা

বর্তমানে উইন্ডোজ, অ্যান্ড্রয়েড, ব্ল্যাকবেরি ও আইওএস প্ল্যাটফর্মে নতুন নতুন অ্যাপ্লিকেশন বাড়ছে। আপনার পুরোনো স্মার্টফোন ব্যবহার করে আপনার প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশনটি আগে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

নতুন স্মার্টফোনে কোনো অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করার আগে পুরোনো স্মার্টফোনে তা পরীক্ষা করে দেখে নিলে নতুন স্মার্টফোনে নানা রকম ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলতে পারে। এ ছাড়াও পুরোনো স্মার্টফোনে কাস্টম রম পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ নিতে পারে।

কাস্টম রম কোনো অপারেটিং সিস্টেমের সর্বশেষ সংস্করণটি পরীক্ষার সুযোগ করে দেয়। অপ্রয়োজনীয় বোল্টওয়্যার বা অ্যানিমেশন ইফেক্ট সরিয়ে আপনার মোবাইলের ব্যাটারির আয়ু বাড়াতে পারে কাস্টম রম।

বাচ্চাদের খেলনা বা ক্যামেরা

আপনার ঘরে যদি কোনো বাচ্চা থাকে আর তার আগ্রহ যদি ছবি তোলার দিকে থাকে তাহলে আপনার পুরোনো স্মার্টফোনটি হতে পারে তার জন্য লোভনীয় একটি খেলনা।

ডিকেটেড কলিং

আপনার বাড়িটি যদি ওয়াই-ফাইয়ের আওতায় থাকে, তাহলে পুরোনো ফোনটিকে ডেডিকেটেড ভিডিও কলিং ডিভাইস বানিয়ে ফেলতে পারেন। আর তখন ফোনে কল করার কাজটি না হয় হয়ে যাক বাড়তি সুবিধা।

স্মার্ট টেবিল ঘড়ি

আপনার পুরোনো স্মার্টফোনটির আকার আপনার টেবিলঘড়িটির চেয়ে খুব একটা ছোট তো নয়ই, বড়ও হতে পারে। তাহলে প্লে-স্টোর থেকে নামিয়ে নিন যেকোনো ঘড়ির অ্যাপ আর একটি স্ট্যান্ডে বসিয়ে বানিয়ে ফেলুন স্মার্ট টেবিল ঘড়ি।

ওয়্যারলেস রাউটার

আপনার পুরোনো স্মার্টফোনটি কী বিল্ট ইন ওয়াই-ফাই হটস্পট? এই ফিচারটি থাকলে আপনি সহজেই পুরোনো স্মার্টফোনটিকে পোর্টেবল রাউটার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। থ্রিজি সিমকার্ড দিয়ে এই সুবিধা নিতে পারেন। পকেট ওয়াই-ফাই হিসেবে এই পুরোনো স্মার্টফোনটি ব্যবহারের ফলে প্রতিটি ইন্টারনেট সুবিধার পণ্যে আলাদা আলাদা ইন্টারনেট নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। নিরাপদ অ্যাকসেস পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে নিজের হটস্পট তৈরি করে নিতে পারেন নিজেই।

ভার্চুয়াল মুভি থিয়েটার

মুভি দেখতে ভালোবাসেন, আছে কোনো পুরোনো স্মার্টফোন , তাহলে গুগল কার্ডবোর্ড বা স্যামসাং গিয়ার VR Box এর মতো কোনো একটি গেজেট কিনে নিন আর প্লে-স্টোর থেকে নামিয়ে নিন ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কোনো একটি অ্যাপ। এবার বসে যান ভার্চুয়াল মুভি থিয়েটারে।

টিভির মিডিয়া প্লেয়ার

এখনকার দিনে সবার ঘর ভরা থাকে বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইসে। বেশিরভাগেরই আবার নিয়ন্ত্রণ থাকে রিমোটে। যার কারণে রিমোটের সংখ্যা হয় অনেক।এর থেকে দু-একটি হারিয়ে যাওয়া বা নষ্ট হওয়া অস্বাভাবিক কিছুই না। আর যদি নষ্ট হয়েই যায়, সেই রিমোট আলাদা কিনতে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সে ক্ষেত্রে আপনার পুরোনো মোবাইলটি হতে পারে বড় সমাধান। বর্তমানে প্রতিটি স্মার্ট ডিভাইসেরই নিজস্ব অ্যাপ আছে। আর যদি আপনার ফোনে আইআর পোর্ট থাকে, তাহলে ইউনিভার্সাল রিমোট অ্যাপ ইন্সটল করে সব ডিভাইস এক রিমোট দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। বেঁচে যাবেন অনেক রিমোটের হিসাব রাখার ঝামেলা থেকে।

অডিও বুক শুনে পড়ুন

ধরলাম আপনার বই পড়ার অভ্যাস আছে। আবার এমন কোথাও ঘুরতে যাচ্ছেন যে বেশি বই নিয়ে যেতে পারছেন না। সমস্যা নেই, এই সময় আপনার পুরোনো স্মার্ট ফোনটি কাজে লাগতে পারে । কিন্ডেল অ্যাপটি ফোনে নামিয়ে নিন আর অ্যামাজন স্টোর থেকে ই-বুক পড়ুন যত খুশি। শ্রুতি ভার্সনের বই পড়ার অ্যাকউন্টে যদি আপনি সাবস্ক্রাইব করে থাকেন, তাহলে কাজ করতে করতে পড়া শুনতে পারেন আপনার পছন্দের অডিও বইটির।

মিউজিক প্লেয়ার

এখনকার সময়ে অনেক মাল্টিমিডিয়া স্পিকার পাওয়া যায় যেগুলোতে ব্লু-টুথ বা ওয়াই-ফাই যুক্ত করা। সে ক্ষেত্রে আপনার পুরোনো স্মার্ট ফোনে যদি কোনো মিউজিক স্ট্রিমিং সার্ভিসে লগইন করা থাকে, তাহলে ফোনটি চার্জে লাগিয়ে কানেক্ট করে দিন স্পিকারের সঙ্গে আর অ্যাপে চালিয়ে দিন গান। মিউজিক প্লেয়ার একদম রেডি।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কাজে

আপনার পুরোনো ফোনটি যদি সচল থাকে আর আপনার কোনো কাজে না লাগে , তাহলে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কাজে লাগতে পারে ।

অ্যাপ স্টোরে পাবেন BOINC বা এমন অন্য অনেক অ্যাপ, যেগুলো আপনার ফোনে চালু করলে ফোনটাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবে ওই প্রকল্পের গবেষকরা।
বেছে নিন আপনার পছন্দের প্রজেক্ট, ফোনটি কানেক্ট করুন ওয়াই-ফাইতে আর বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ শামিল হয়ে যান।

ইমার্জেন্সি নম্বরে কাজে

পুরোনো ফোনটি হয়তো বন্ধই করে ফেলে রেখেছেন। সিমটি চালু করেছেন নতুন ফোনে। তাই বলে পুরোনো ফোনটি অকার্যকর ভাববেন না।

এটা কি জানেন যে ৯১১-এর মতো ইমার্জেন্সি নম্বরে ফোন করতে সিম লাগে না, লাগে না ডাটা কানেকশনও, তাহলে আজ থেকে পুরোনো ফোনটি মাঝেমধ্যে চার্জ দিয়ে অন করে রেখে দিন আপনার ঘরে বা গাড়িতে। বিপদ তো আর বলে কয়ে আসে না।

পিসির রিমোট কন্ট্রোলার

আপনার পুরোনো মোবাইল ফোনটিকে পিসির রিমোট কন্ট্রোলার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। পিসির কন্ট্রোলার হিসেবেও যদিও ওয়্যারলেস মাউস সবচেয়ে সুবিধার, কিন্তু যদি দূরে সোফা বা চেয়ারে বসে কম্পিউটার চালানোর প্রয়োজন হয়, তখন পুরোনো স্মার্টফোনটিকেও কন্ট্রোলার হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে। কম্পিউটারের ব্রাউজিং বা কোনো ভিডিও যদি বড় স্ক্রিনে দেখতে চান তবে পুরোনো মোবাইলটি কাজে লাগান। বিনামূল্যের অ্যাপ্লিকেশন মোবাইল মাউস লাইট এক্ষেত্রে আপনার কাজে লাগতে পারে। অ্যাপ্লিকেশনটির পাশাপাশি মোবাইল মাউসের ওয়েবসাইট থেকে সার্ভার সফটওয়্যারটিও ডাউনলোড করে নিতে হবে। মোবাইল ফোন পিসি রিমোট হিসেবে ব্যবহার করতে মোবাইল ও পিসি উভয়ই একই ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে সংযুক্ত থাকতে হবে আর বাকি কাজটি সফটওয়্যারই সম্পন্ন করবে। মোবাইল মাউস অ্যাপটির মাধ্যমে আপনার স্মার্টফোনটি দিয়েই মাউস, কিবোর্ড কিংবা ইউনিভার্সাল রিমোটের কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। আইওএস প্ল্যাটফর্মের জন্য লজিটেকের টাচ মাউস অ্যাপটিও কাজে লাগানো যেতে পারে।

ওয়্যারলেস সিকিউরিটি ক্যামেরা

স্মার্টফোনকে ওয়্যারলেস সিকিউরিটি ক্যামেরা হিসেবে রূপান্তর করার বেশ কিছু অ্যাপ্লিকেশন মার্কেটপ্লেসে পাবেন। অ্যান্ড্রয়েডের জন্য আইপি ওয়েবক্যাম, আইওএসের জন্য আইভিজিলো স্মার্টক্যাম কাজে আসতে পারে। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো আপনার স্মার্টফোনের ক্যামেরার সাহায্যে লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং করতে পারে যা অন্য কোনো স্ট্রিমিং সমর্থিত পণ্যের যেকোনো ব্রাউজারে বা ভিডিও প্লেয়ারে দেখা যায়। এজন্য পুরোনো স্মার্টফোনটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে, চার্জার প্লাগ ইন করতে হবে। স্ট্রিমিং অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করা থাকলে এবং ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের থাকলেই আপনার পুরোনো মোবাইল ফোনটি ওয়্যারলেস সিকিউরিটি ক্যামেরার কাজ করবে।

জিপিএস নেভিগেটর

আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে গুগল ম্যাপস ও নেভিগেশন বিনামূল্যেই পাবেন। আপনি হয়তো গাড়ি চালানোর সময় এই নেভিগেশন ব্যবহার করেন।এর অর্থ হচ্ছে আপনার পুরোনো স্মার্টফোনটি যদি অ্যান্ড্রয়েডচালিত হয় তবে গাড়ির জন্য আলাদা করে জিপিএস নেভিগেটর কেনার দরকার হবে না। আপনাকে পুরোনো স্মার্টফোনটি গাড়িতে নেভিগেশন করার জন্য স্থায়ীভাবে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।এ জন্য জেনেরিক মাইক্রো ইউএসবি ১২ ভোল্ট কার চার্জার দরকার হবে যা মোবাইল ফোনটিকে চার্জ দিতে কাজে লাগবে। কার ড্যাশবোর্ড নামের একটি অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করে নিলে এবং প্রয়োজনমতো কাস্টমাইজ করে নিলে পুরোনো স্মার্টফোনটিকে কার নেভিগেটর হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

মিডিয়া প্লেয়ার

মিডিয়া প্লেয়ারের বিকল্প হিসাবেও ব্যবহার করা যায় পুরোনো মোবাইল ফোন। কারণ, প্রায় সব ধরনের মোবাইল ফোনেই মিডিয়া প্লেয়ার সুবিধা থাকে। তবে মনে রাখতে হবে, এ সুবিধা পেতে হলে আপনার পুরোনো মোবাইল ফোনে অবশ্যই এইচডিএমআই কেবল ব্যবহারের সুযোগ থাকতে হবে। কেবলটি যুক্ত করলেই মোবাইল ফোনের মেমোরি কার্ডে থাকা বিভিন্ন সিনেমা বা ভিডিও টেলিভিশনে দেখা যাবে।

Leave a Comment